ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং: আধুনিক যুগে ব্র্যান্ডিং ও প্রচারণার সহজ কৌশল
বর্তমান ডিজিটাল যুগে মানুষের কেনাকাটার ধরণ বদলে গেছে। এখন মানুষ টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন দেখে পণ্য কেনার চেয়ে তাদের প্রিয় কোনো ব্যক্তিত্ব বা 'ইনফ্লুয়েন্সার' (Influencer)-এর পরামর্শকে বেশি গুরুত্ব দেয়। আর এই ধারণাকে কাজে লাগিয়ে যে বিপণন পদ্ধতি গড়ে উঠেছে, তাকেই বলা হয় ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং।
আজকের ব্লগে আমরা জানবো ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং কী, কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ এবং কীভাবে আপনি আপনার ব্যবসার জন্য এটি ব্যবহার করবেন।
ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং কী?
সহজ কথায়, ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে কোনো জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে কোনো পণ্য বা সেবার প্রচারণা চালানো হয়। ইনফ্লুয়েন্সার হতে পারেন একজন ইউটিউবার, ইনস্টাগ্রাম মডেল, ব্লগার কিংবা কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ। তাদের একটি বড় অনুসারী (Followers) বেস থাকে যারা তাদের মতামতকে বিশ্বাস করে।
কেন ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং আপনার ব্যবসার জন্য জরুরি?
১. দ্রুত বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি: মানুষ বিজ্ঞাপনের চেয়ে মানুষের কথায় বেশি বিশ্বাস করে। যখন একজন ইনফ্লুয়েন্সার আপনার পণ্য ব্যবহার করে ভালো রিভিউ দেয়, তখন তাদের ফলোয়াররা সহজেই আপনার ব্র্যান্ডের ওপর আস্থা পায়।
২. টার্গেটেড অডিয়েন্স: আপনি যদি প্রসাধনী বিক্রি করেন, তবে একজন বিউটি ব্লগারের মাধ্যমে প্রচারণা চালালে আপনি সরাসরি আপনার টার্গেট কাস্টমারের কাছে পৌঁছাতে পারবেন।
৩. সোশ্যাল মিডিয়া রিচ: ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক বা ইনস্টাগ্রামের অ্যালগরিদম অনুযায়ী ইনফ্লুয়েন্সারদের পোস্ট অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছায়, যা সাধারণ বিজ্ঞাপনের চেয়ে কার্যকর।
৪. সাশ্রয়ী বিপণন: বড় বড় সেলিব্রিটিদের দিয়ে টিভিসি বানানোর চেয়ে মাইক্রো-ইনফ্লুয়েন্সারদের (যাদের ফলোয়ার ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজারের মধ্যে) মাধ্যমে প্রচারণা চালানো অনেক সাশ্রয়ী।
সফল ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং ক্যাম্পেইন করার টিপস:
সঠিক ইনফ্লুয়েন্সার নির্বাচন: শুধু ফলোয়ার বেশি হলেই হবে না, আপনার পণ্যের সাথে ওই ইনফ্লুয়েন্সারের কন্টেন্ট সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না তা যাচাই করুন।
এনগেজমেন্ট চেক করুন: ফলোয়ারের সংখ্যার চেয়ে ওই ইনফ্লুয়েন্সারের পোস্টে লাইক ও কমেন্টের অনুপাত (Engagement Rate) কত, তা দেখা জরুরি।
সৃজনশীলতা বজায় রাখা: ইনফ্লুয়েন্সারকে তার নিজস্ব স্টাইলে কন্টেন্ট তৈরি করতে দিন। অতিরিক্ত স্ক্রিপ্টেড প্রচারণা মানুষ পছন্দ করে না।
ফলাফল ট্র্যাক করা: ক্যাম্পেইন শেষে কতজন ক্লিক করল বা কতটুকু সেল হলো তা ট্র্যাকিং লিংকের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করুন।
বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং-এর ভবিষ্যৎ
বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে ফেসবুক এবং ইউটিউব ভিত্তিক ইনফ্লুয়েন্সারদের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। বিশেষ করে ই-কমার্স এবং এফ-কমার্স উদ্যোক্তারা ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং ব্যবহার করে অভাবনীয় সাফল্য পাচ্ছেন। আপনি যদি আপনার ব্র্যান্ডকে মানুষের কাছে আরও নির্ভরযোগ্য করতে চান, তবে আজই শুরু করতে পারেন ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং।
শেষ কথা:
সঠিক পরিকল্পনা এবং সঠিক ইনফ্লুয়েন্সার বাছাই করতে পারলে এই বিপণন কৌশল আপনার ব্যবসার চিত্র বদলে দিতে পারে। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের এই আধুনিক ধারায় নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং হতে পারে আপনার সেরা বিনিয়োগ।
